কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লায় তুচ্ছ ঘটনায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে আনোয়ার হোসেন (৩৬) নামের এক যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ওই সংঘর্ষে দুই গ্রামের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। জেলার লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের ছালেহপুর-টঙ্গীরপাড় গ্রামের লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার হোসেন ছালেহপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে এবং লাকসাম পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
স্থানীয় লোকজন জানায়, গত সোমবার বিকেলে সাখাওয়াত ও জামাল নামে দুই যুবক টঙ্গিরপাড় গ্রাম দিয়ে বেপরোয়া ভাবে মোটর সাইকেল চালিয়ে লাকসামের পথে যাচ্ছি ছিল। ওই আরোহীরা পুনরায় সালেহপুর নিজ গ্রামে যাওয়ার পথে টঙ্গিরপাড় গ্রামে পৌছলে হায়াতুন্নবী নামে এক যুবকের নেতৃত্বে ৫/৬জন লোক মোটর সাইকেল থামিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মোটর সাইকেল আরোহী সাখাওয়াত ও জামালকে মারধর করে এবং মোটর সাইকেলটি আটকে রাখে। পরক্ষণে সাখাওয়াত ও জামাল সালেহপুর নিজ গ্রামে এসে লোকজনকে খবর জানালে স্থাণীয় মেম্বার সফিউল্ল্যাহ ও যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিলেও এলাকার বিক্ষুদ্ধ যুবকরা দলে দলে টঙ্গিরপাড় গ্রামে হামলা চালায়। রাতে এক পর্যায়ে দুই গ্রামের লোকজন সামাজিক ভাবে ঘটনার মিমাংসার জন্য বসা হলেও উভয়গ্রামের কতিপয় যুবকের অতি বাড়াবাড়িতে ওইসময় সংর্ঘষ বেঁধে যায়। এতে উভয়পক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সালেহপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৪৫), সোহাগ (২২), আলআমিন (১৮) ও হুমায়ুন (২৫) কে লাকসাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অবস্থায় বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা আহত সোহাগকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে প্রেরন করেন।
সূত্রটি আরো জানায়, ওইদিন রাতে চিকিৎসা শেষে আহত যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বাড়ী যাওয়া পথে টঙ্গিরপাড় নামকস্থানে পৌছলে গ্রামের কতিপয় যুবক আনোয়ারকে বেদম মারধর করে। খবর পেয়ে সালেহপুর গ্রামের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে আশংকাজনক অবস্থায় যুবলীগ নেতা আনোয়ারকে লাকসাম সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। তাৎক্ষনিক এ খবর সালেহপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে প্রায় ১৪০/১৫০জন যুবক দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে টঙ্গিরপাড় গ্রামে হামলা চালিয়ে ১০/১৫টি ঘরবাড়ী, দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় উভয়পক্ষের অত্যন্ত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে।
খবর পেয়ে লাকসাম থানা পুলিশ সোমবার সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও রাতভর দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংর্ঘষ থামাতে না পারলেও পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এলাকার পরিস্থিতি হঠাৎ করে অবনতি ঘটলে কুমিল্লা থেকে রির্জাভ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এর আগে লাকসাম থানা পুলিশ দুই পক্ষের উত্তেজনা নিরসনে ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালায়। বর্তমানে টঙ্গিরপাড় গ্রামটি পুরুষশূন্য হলেও এলাকার পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
নিহত যুবলীগ নেতা আনোয়ারের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানায়, আমার স্বামী মৃত্যুর আগে আমাকে টঙ্গিরপাড় গ্রামের বাচ্চু, কামাল, চৌধুরী, কবির, খায়েরসহ ১০/১২জন এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সফিউল্ল্যাহ জানায়, ঘটনাটি শুনার সাথে সাথে দুই গ্রামের লোকজন নিয়ে মিমাংসা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উভয় গ্রামের কতিপয় যুবকের অতি বাড়াবাড়িতে এ ভয়াবহ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সোমবার রাত থেকে দফায় দফায় উভয়পক্ষের হামলায় আমরাও আতংকিত ছিলাম তারপরও অনেক চেষ্টারপর এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু যুবলীগ নেতা আনোয়ারের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এলাকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে মোড় নেয়। এতে ৪/৫ রাউন্ড ফাঁকাগুলি মারতে হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহত আনোয়ারের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লায় মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং এলাকায় পুলিশ টহল আরো জোরদার করা হয়েছে।
খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব তাজুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান এড.ইউনুছ ভুঁইয়া, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সফিউল আলম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলীসহ বৃহত্তর লাকসামের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহত আনোয়ারের শোকসপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকলকে শান্ত থাকার আহবান জানান। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত নিহত আনোয়ারের পক্ষে হত্যা মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।